ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-২০২২ নিয়ে বাংলাদেশে এত উন্মাদনা কেন?
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-২০২২ নিয়ে বাংলাদেশে এত উন্মাদনা কেন?
ফুটবল বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। বিশ্ব এখন ফুটবল জ্বরে কাঁপছে। কাতারে শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর। বিশ্বকাপ আসছে টানা চার বছর পর। বিশ্বকাপ এলে এশিয়ার অন্যতম দেশ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা দল নিয়ে বাংলাদেশে যে উন্মাদনা দেখা গেছে তা বিশ্বে একটু বিরল।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-২০২২ নিয়ে বাংলাদেশে এত উন্মাদনা কেন? |
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-২০২২ নিয়ে বাংলাদেশে এত উন্মাদনা কেন?
আমাদের ফুটবল উন্মাদনার বিষয়টি বিদেশি মিডিয়ার চোখ এড়ায়নি, আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টও এড়ায়নি। গত শুক্রবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল নিয়ে উন্মাদনা থেকে শুরু করে ফুটবল মারামারির খবরও উঠে এসেছে। পাঠকের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
প্রতিবেদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পছন্দের দলের পতাকা ঝুলানো। বিশ্বকাপ এলে বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা টাঙিয়ে দেয় তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে। দুই দেশের পতাকা আঁকা বা টাঙানো হয়েছে বাড়ির ছাদে, বারান্দায় এমনকি সেতুতেও। বিশ্বকাপের সময় বাংলাদেশিরা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে তর্ক করত। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কখনও কখনও এটি ইট-পাথর ছুড়ে মারামারিতে পরিণত হয়।
ক্রিকেট-পাগল দেশ বলে মনে করা দেশে ফুটবল নিয়ে এমনই উত্তেজনা। এমনকি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ তাদের জীবনে কখনো আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলিয়ানদের সাথে দেখা করেনি। বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার দূরত্ব হাজার হাজার মাইল। ফুটবল নিয়ে এখনো এমন উন্মাদনা।
আকদ কাদের চৌধুরী ঢাকার বাসিন্দা। নেইমারের ব্রাজিলিয়ান ভক্ত আকদ কাদের চৌধুরী টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরে কাজ করেন। তার মতে এটা পাগলামি! ঘটনার সারমর্ম করতে চাইলে 'কিন্তু এটা পাগলামী, যা সারা দেশকে জাগিয়ে তোলে।'
২০ নভেম্বর শুরু হবে ফুটবল বিশ্বকাপ। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপের উন্মাদনা। দর্জি পান্না সরদার আকর্ষণীয় ছাড়ে বিক্রির জন্য বিভিন্ন দেশের পতাকা সাজিয়েছেন। একটি কিনলে তিনি বিনামূল্যে আরেকটি পতাকা দিচ্ছেন। পতাকা কিনলে লাকি কুপন ফুটবলের সময়সূচী সহ আকর্ষণীয় ডিসকাউন্টও দিচ্ছে। বিসিক এলাকা, বগুড়া শহর, ১৯ অক্টোবর ছবি: সোয়েল রানা
এদিকে আর্জেন্টিনার ভক্ত ঢাকার বাসিন্দা নোফেল ওয়াহিদ বলেন, "জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ একটি বড় দেশ। তবে আর্জেন্টিনার খেলা সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনার বিচারে আপনি দেশটিকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারেন। ভক্ত এবং ব্রাজিল ভক্ত।" বললেন, মজার ব্যাপার। এক্ষেত্রে কোনো যুক্তি নেই। লাতিন আমেরিকা থেকে এত দূরে দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশে ফুটবল নিয়ে এমন প্রতিযোগিতা কেন? এটা ব্যাখ্যা করা কঠিন.
আকদ কাদের চৌধুরী এবং নোফেল ওয়াহিদ একমত যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা উন্মাদনা শুরু হয়েছিল ৮০ এর দশকে। ১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। এক দশক পর দেশে রঙিন টেলিভিশনের কেনাকাটা বেড়ে যায়। তখনই তারা ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার রঙিন জার্সি পরা খেলোয়াড়দের দেখতে শুরু করে। আর তখনই মানুষ এই দুই দলের ভক্ত হতে শুরু করে। তবে এ ক্ষেত্রে দিয়েগো ম্যারাডোনার কথা আলাদা করে বলা যাবে না। 1986 সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে দুই গোলের কথা মানুষ ভুলতে পারেনি। নোফেল ওয়াহিদ বলেন, আসলে ম্যারাডোনা একজন মন্ত্রমুগ্ধ ফুটবলার ছিলেন।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-২০২২ নিয়ে বাংলাদেশে এত উন্মাদনা কেন? |
তবে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়েও সমস্যা রয়েছে। মানুষ এত ভালোবাসলেও বাংলাদেশের ফুটবল সেভাবে গড়ে উঠতে পারেনি। ক্রিকেটে ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ৭ম এবং ফুটবলে ১৯২তম। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় বাংলাদেশিরা এসব ভুলে প্রিয় দুই দলকে সমর্থন করেন। সেই সময়ের তরুণরা ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপকে আজীবন মনে রাখবে।
খেলা দেখতে এক জায়গায় কত মানুষ জড়ো হতেন তা এখন বাংলাদেশে ইতিহাস। সেই বিশ্বকাপে 16 রাউন্ডে মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। সেই খেলা দেখতে ঘরে ঘরে চলছিল বিশাল আয়োজন। ব্রাজিল ভক্ত আকদ কাদের চৌধুরীর বয়স ছিল ১০ বছর। তিনি জানান, ওই সময় তাদের বাড়িতে একটি বড় ভোজের আয়োজন করা হয়। খেলা দেখতে জড়ো হন তার বাবার বন্ধু ও সহকর্মীরা। অন্তত ৫০ জন একসঙ্গে বসে খেলা দেখছিলেন।
তিনি বলেন, হাজার মাইল দূরত্বে থাকা দুই দলের জন্য আমার পরিবারের সদস্যরা কেন কাঁদছে, হাসছে এবং ঝাঁপিয়ে পড়ছে তা আমি বুঝতে পারিনি।
সেই খেলায়, ক্লদিও ক্যানিজিয়া ৮২তম মিনিটে গোল করে ম্যারাডোনার দেশকে ১-০ ব্যবধানে জয় এনে দেন। ৩২ বছর আগের সেই স্মৃতি মনে করতে চান না কাদের চৌধুরী। যদিও সেই বিশ্বকাপে ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। খেলার ৮৫ মিনিটে পেনাল্টি গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। ছয় বছর বয়সী নোফেল ওয়াহিদ বলেন, "আমার এটা মনে আছে। পেনাল্টিটা স্পষ্টতই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গিয়েছিল। আমার মনে আছে ম্যারাডোনা যখন অধিনায়ক হিসেবে পদক পেয়েছিলেন, তখন আমি কাঁদতে শুরু করেছি।
সেই সময়ের ফুটবল ক্রেজ এখনো আছে। নেইমার ছাড়া অন্য খেলোয়াড়দের চেনেন বাংলাদেশিদের সংখ্যা